পুরীর ভূতুড়ে গেষ্টহাউস 2016

images

সত্য ঘটনা অবলম্বনে,

প্রথমেই জানাই আমি কোন লেখক না, “লক ডাউন” এ বাড়িতে বসে সময় কাটছে না, তাই ভাবলাম (আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত) ভ্রমণ কাহিনি লিখি। তাই লিখছি। ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা করবেন।

ঘটনাটা বিশ্বাস করা বা না করা আপনাদের কাছে, আমি নিজেও যে বিশ্বাস করেছি তা নয়, কিন্তু এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাই নি কিন্তু সত্যি সত্যিই কিছু অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিল। তখন আমাদের কারোর কাছেই কোন Android Phone ছিল না, ক্যামেরা ছিল কিন্ত বিল্ডিং এর ছবি তুলতে পারি নি। তাই ছবি দিতে পারলাম না। Google এ search করলে নিশ্চয়ই পাবেন। তাছাড়া, সেই সময়কার স্টাফ থাকলে বালিয়াপান্দা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর নিলেই জানতে পারবেন।
বয়স (তখন) 43 হলেও কোনোদিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। বন্ধু বান্ধব, স্ত্রী, কন্যাদ্বয় এবং আমার প্রেসের দুই ইয়ং কর্মচারীদের মাথাখারাপের দরুণ 2015 (ছিলাম লাইটহাউস এর কাছে, মহাপ্রভু হলিডে হোম) থেকে প্রতি বছরেই দোলের সময় আমি বা পরিবার ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়া আড়ম্ভ করেছি এবং আমাদের বেড়ানোর একটাই স্থান, পুরী (দিপু দার পু, অবশ্য 2 বার দি হয়ে গেছে)। 2020 তেও বাদ দিই নি (6th to 11th March, ছিলাম গায়েত্রি হোটেল এ, মেরিন ড্রাইভ এর কাছে বলা যেতে পারে)। আমাদের বিশেষ ঘটনাবহুল সালটা ছিল 2016। দ্বিতীয় বার, উত্তেজনাও একটু বেশী। খবরাখবর নিয়ে যথারীতি ডিসেম্বর 2015 এ টিকিট কাটলাম through IRCTC Up & Down। সর্বসাকুল্যে 6 দিনের Tour, মানে চারদিন থাকা হবে। যাত্রী বলতে আমি, আমার স্ত্রী, কন্যাদ্বয় (যথাক্রমে বয়স 11 আর 9) এবং আমার প্রেসের মেশিনম্যান রাজা ও অ্যাসিস্ট্যান্ট বাবাই। ব্যাবসায়ী হওয়ার সুবাদে এক সহ ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে United Bank of India র Holiday Home with Kitchen Facility including A.C. Room (২টি রুম) বুক করলাম, নাম “বটকৃষ্ণ এনক্লেভ”। Room rent @ Rs 900 X 4 days X 2 Room = 7200/- টাকা। Full paid করতে হল (January র first week এ)। অবস্থান বা ঠিকানা হল বালিয়াপান্দা (যদিও যাওয়ার পরে দেখলাম বালিয়াপান্দার একদম শেষে)। Light House ছাড়িয়ে, Surya Enclave এর পাশের Building। ব্যাপারটা দাড়াল কলকাতা কিন্তু নিউ টাউন, রাজারহাট।

যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে জগন্নাথ এক্সপ্রেসে রওনা দিলাম, পরদিন সকালবেলা পৌছে গেলাম পুরী। গেস্টহাউস পৌছনোর জন্য অনেক দর কষাকষি করে একটা ম্যাজিক গাড়ি পেলাম 250/- টাকার বিনিময়ে। রুমের বুকিং স্লিপটা দেখানোর পরে ড্রাইভার আমাদের নিয়ে রওনা হোল গন্তব্যস্থল এর দিকে। ড্রাইভার নিজের ভাষায় একে অপরকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে চলেছে। প্রায় 45 মিনিট পর (একটু খুঁজতে হয়েছিল) পৌছলাম সেই বিখ্যাত গেস্টহাউস এ। আমাদের নামিয়ে দিয়ে সে একবার বিল্ডিং এর দিকে আর একবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল (বিষয়টা রাজা লক্ষ্য করেছিল, যদিও তখন ও আমাদের কিছু বলে নি)। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। কিছুটা দুরে দুরে কয়েকটি হোটেল। বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরে নিচের বেসমেন্ট থেকে কেয়ারটেকার বেরিয়ে এল। মুখে কোন হাসি নেই, অদ্ভুত গম্ভীর ভাব, কথা খুবই কম বলে এমনকি নামটিও অদ্ভূত ছিল (যদিও এখন আর মনে নেই)। যাই হোক একটা রুম দিল গ্রাউন্ড ফ্লোর এ আর একটা দিল থার্ড ফ্লোর এ, মানে চারতলা তে। অনেক অনুরোধে ও তার পরিবর্তন হোল না। রাজি হলাম, মানে হতে হোল। চার তলার ঘরে ছোট একটা ছোট ফ্রিজ ছিল, দুটিতেই Water purifier ছিল কিন্তু কোন লিফট নেই। ঠিক হোল নীচে রাজা ও বাবাই থাকবে আর আমি পরিবার নিয়ে ওপরে। দেখে মনে হোল বিল্ডিং টি সম্প্রতি তৈরি হয়েছিল, রং ছিল কালছে সবুজ। প্রসঙ্গত জানাই যে এই রুম দুটিতে আমার পরিচিত দুটি পরিবার বেড়াতে এসেছিল প্রায় 8/9 মাস আগে। যাই হোক কেয়ারটেকার এসে শুধু রুম খুলে দিয়ে চলে গেল। উপরের ঘরে শুধুমাত্র লাগেজ রেখে, তালা দিয়ে পুনরায় নীচে চলে এলাম কারণ কন্যাদ্বয় খিদেতে অস্থির হয়ে পড়েছে। এদিকে কেয়ারটেকার রুমে বিছানার চাদর চেঞ্জ করে দিয়ে যাবে বলল কিন্তু এল না। রাজাকে বললাম ডেকে নিয়ে এসো আর ওনার ফোন নং টা নিয়ে নাও। রুমের ঘড়ি দেখলাম, 8:50 বাজে। প্রায় 10 মিনিট পরে রাজা ওনাকে ধরে নিয়ে এল। দুটো চাদর দিল, নীচের ঘরে রেখে, আমাদের তালা দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাজারের উদ্দেশ্যে।

কিন্তু বাজার তো অনেকটা দূর। যথারীতি Auto র প্রয়োজন পড়ল। দু পা হেঁটে বাম দিকে একটা চায়ের দোকান পেলাম। ওখানে চা খেয়ে, দোকানদার কে Auto কোথায় পাবো জিজ্ঞেস করলাম। তার নির্দেশ অনুযায়ী আরো দু মিনিট হেঁটে একটা লিঙ্ক রোড এ এসে (যেখানে গত বার ছিলাম) Auto পেলাম। 90 টাকা চাইল, দর করার পর 60 টাকায় বাজারের কাছে নামিয়ে দিল। প্রথমে টিফিন করলাম, তারপর যথাক্রমে মাছ (বড় সাইজের ট্যাংরা, 300/- কেজি) সব্জি, মুদি দ্রব্য কিনলাম। পুণরায় Auto তে Holiday Home। এরপর রান্নার প্রস্তুতি। আমি গেলাম উপরের ঘরে অতিরিক্ত মাছটা রাখতে। রুমের দরজা খুললাম, ফ্রিজের সুইচটা অন করে, ডোর ওপেন করে অনুভব করলাম ফ্রিজ এর ভিতরটা ঠান্ডা (আগে থেকে চললে যেমন হয়)। যাই হোক বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে, দরজা তে তালা দিয়ে নীচে এলাম, কাউকে কিছু বললাম না। নীচের রুমে চলল ডাল, ভাজা, ডিম (বাবাই নিরামিষ, কিন্তু ডিম খায়), মাছ ইত্যাদি রান্না। একদিকে স্নানের তাড়া তাই সবাই (আমি বাদে, শরীর টা ভালো ছিল না, কেমন যেন জ্বর জ্বর লাগছিল) হেল্প করাতে 2 ঘন্টা লাগল। রান্নার পরে, 12 টা 20 নাগাদ (রুমের ঘড়ি অনুযায়ী) ওরা চলে গেল সমুদ্রের জলে দাপাদাপি করতে এবং রুমের ভিতর থেকে কয়েকটি ছবি তুলে আমি গেলাম ঘুমের জগতে। ওরা স্নান থেকে ফিরে এল, দ্বিপ্রাহরিক আহার এর তদপরে ঘুম। ঘুম থেকে উঠেই সকলে চললাম স্বর্গদ্বার এর নিকট ট্যুরিস্ট বাজারে। (আবার সেই Auto, rate টা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল, 60 টাকা) উদ্দেশ্য টিফিন খেয়ে বীচ এর কাছে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সমুদ্র ঢেউ উপভোগ করা। যাই হোক 8:50 নাগাদ রুমে ফিরলাম। ফিরে পুনরায় (মাছের সাথে) অন্য মেনু তৈরির জন্য সবাই নীচের রুমে রইলাম। বিশেষত বাবাই নিরামিষ (ডিম খায়, কিন্তু ওবেলা খেয়েছে, এবেলা খাবে না) তাই ওর জন্য আলাদা কিছু রান্নার প্রয়োজন।

আমি ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত, কন্যাদ্বয় ঘরে খেলছে। রাজা মোবাইল ঘাটছে। বাবাই ও wife রান্না ঘরে (রান্না ঘর বলতে ঘরের বাইরে বেশ কিছুটা অতিরিক্ত জায়গা, তার একদিকে রান্নার ব্যবস্থা)। রাজাকে আমার wife কিছু একটা ধুতে বলেছিল, ও দ্রব্যটি ধুয়ে টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসে আমার কন্যাদ্বয়কে বকাঝকা করল। কারণ (5 টাকা দামের) একটা ছোট Lifeboy সাবান নিখোঁজ। ও যেখানে রেখেছিল ওটা সেখানে নেই, খুঁজে পাওয়া যায় নি। আমরাও সাবান নিয়েছিলাম, কিন্তু তখনও পর্য্যন্ত তাকে বাথরুমে স্থান দেওয়া হয় নি, আমাদের ব্যাগে ছিল। এরপর wife আমাকে বলল যে, water purifier এর switch টা বন্ধ করতে, ও switch টা অফ করেছিল, কিন্তু সেটা বন্ধ হচ্ছিল না। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে জানিয়ে দিলাম switch খারাপ, ওটা ঠিক হবে না (দেখলাম নিজে থেকেই বন্ধ হচ্ছিল আর নিজে থেকেই জল পড়ছিল, কম বেশী)। রাজাকে বললাম Caretaker কে ফোন করতে, না হলে সারারাত জল পরবে। রাজা বলল যে, ফোন করব না, গিয়ে দেখি ও কি করছে, একটু গল্পও করা যাবে, খুব একটা রাত তো হয় নি 10:10 বাজে, বলে রাজা দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। রাজা ফিরে এসে দরজার ছিটকিনি দিয়ে দিল (ঠিক ছিটকিনি নয়, হ্যজবল্ট যা দরজার মাঝখানে অবস্থিত, বাচ্ছরাও হাতে পাবে) আর বলল “ও বলেছে জল পড়ুক, কিছু হবে না, কাল সকালে দেখা যাবে”। যদিও বড় কন্যা বলল “দেখো রাজা কাকা আর জল পড়ছে না।” একসঙ্গে সকলে দেখলাম যে সত্যিই আর জল পড়ছে না। যাই হোক, এবার খাওয়ার পালা। খাওয়ার শেষে কন্যাদ্বয় বলল যে, বাবা ওপরে চল, ঘুম পাচ্ছে। আমি বললাম যে, মায়ের বাসনপত্র ধোয়া হয়ে গেলে একবারে যাবো, মোবাইল এর ঘড়ি দেখে বললাম বেশি রাত হয় নি, 10:50। রাজা বলল, দেখুন দাদা ঘড়িটাতে (দেয়ালে টাঙানো) তখন দেখলাম 10:10 এখনো 10:10 বাজে। আমি ওকে বললাম যে, ঘড়িটা খারাপ। রাজা এবার আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাল আর বলল যে “দাদা বিশ্বাস করুন, আমি বিকালে বেরনোর সময় 6:00 বাজে দেখেছি।” আমি বললাম ছাড়ত, তোমার সবটাতেই বাড়াবাড়ি, হতে পারে তখনি ব্যাটারি শেষ হয়েছে। কিন্তু আমি পুনরায় তাকিয়ে দেখলাম সেকেন্ড এর কাঁটাটা ঘুরছে (একদম সঠিক)। বাবাই ও আমার স্ত্রীও বলল ঘড়িটা খারাপ হয়ে গেছে। সকলে খারাপ বলাতে রাজাও ব্যাপারটা মেনে নিল (কিন্তু ওর মুখটা দেখে বুঝতে পারলাম ও রাগ করেছে, কারণ ও আমার কাছে 6 বছর কাজ করছে, আমি ওকে চিনি)। ইতিমধ্যেই wife এর রান্না ঘরের কাজ শেষ হয়েছে, সে বলল চল। আমরা একে অপরকে গুড নাইট জানিয়ে উপরের ঘরে যাওয়ার জন্য এগোলাম। আমি দরজার হ্যাজবল্টটা ধরে টানতেই দরজাটা খুলে গেল। আমি বললাম দরজাটা কেউ বন্ধ কর নি, খোলা ছিল যে, তোমাদের কোন কান্ডজ্ঞান নেই। বকা খাওয়ার ভয়ে বাবাই বলল যে রাজা দা তো লাস্ট এ এল, রাজা দা তুমি দরজাটা দেও নি। রাজা বলল আমি তো বন্ধ করেছিলাম, দাদা দরজাতো বন্ধই ছিল। আমারও যেন মনে পড়ছিলো যে ও দরজাটা বন্ধ করেছিল (বন্ধ করার শব্দ হয়েছিল)। রাজার মুখ দেখে কেন যেন আমার মনে হল ও ভয় পেয়েছে। ঠিক তখনি আমি আর ও দুজনে একসঙ্গে ঘড়ির দিকে তাকালাম (coincidence), ঘড়িতে (রুমের) 11:15 বাজে। আমরা দুজনেই দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। বাবাই ও আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, মুখে কিছু বলল না। ব্যাস, ছোট কন্যা, বাবা আমাকে কোলে নিয়ে চল। ওদেরকে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরার নির্দেশ দিয়ে হাল্কা অন্ধকারআছন্ন সিঁড়ি দিয়ে আমি, wife আর দুই কন্যাকে নিয়ে চললাম চার তলায়, আমাদের রুমের উদ্দ্যেশে। দুই কন্যা ইতিমধ্যে ভূতের আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। Wife দুজনকেই বলল চুপ কর তো তোরা। রুমের দরজা খুলতেই দেখলাম আলো জ্বালানো, কিন্তু আমার যতদূর মনে হয় বিকালে বেরনোর সময় আমি আলো নিভিয়ে ছিলাম।

যাই হোক সকলে মিলে শোয়ার তোরজোর করছি। Wife বলল, ফ্রিজটা চলছে তো, মাছগুলো আছে একবার দেখে এসো। গিয়ে দেখলাম ফ্রিজটা (মানে স্যুইচ) বন্ধ, কিন্তু ভেতরটা ঠান্ডা, সেই আগের মতো (আমি কিন্তু সকালে মাছ রেখে স্যুইচটা অন করেছিলাম)। কাওকে কিছু না বলে পুনরায় স্যুইচটা অন করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম, চিন্তা করছি আমি কি স্যুইচটা তাহলে অন করিনি, wife এর ডাকে চিন্তায় ভাঁটা পড়ল, চললাম বেড রুমে। (প্রসঙ্গত জানাই নীচের ঘর আর ওপরের ঘর একই ডিজাইন, একই স্পেস)। শুয়ে পড়লাম চারজন দুটি বেডে, দুজন করে (দুই কন্যার একই আলোচনা তখনও চলছে)। বড় মেয়ে – “বাবা জিরো ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে রাখো” (ও বরাবরই আলো ছাড়া ভয় পায়)। ঠিক আছে বলে স্যুইচটা অন করতে উঠলাম। উঠে দেখলাম স্যুইচটা অন করা, কিন্তু জ্বলছে না। আমি দু তিনবার অফ অন করেও ল্যাম্পটা জ্বলল না। ধরে নিলাম সকলেই লাইট টা কেটে গেছে। তাহলে এখন কি হবে? সকলে ঠিক করলাম তাহলে টিউব লাইটটা জ্বলুক। পুনরায় শুয়ে পড়লাম (লাইট জ্বলছে)। এমন সময় দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ, “দাদা শুয়ে পড়েছেন?” কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম যে, রাজা ডাকছে। দরজা খুলে দেখি যে, রাজা ও বাবাই, দুজনেই উত্তেজিত ও ভয়ার্ত। রাজা আরম্ভ করল, “ও ঘরে শোয়া যাবে না, অদ্ভুত সব কর্মকান্ড হচ্চে, আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম …….. ইত্যাদি” (ও অবশ্য নিজে সকাল থেকে বিকাল পর্য্যন্ত যা প্রত্যক্ষ করেছিল আমাকে আলাদা ভাবে বীচ এ বসে বলেছিল)। ব্যাপারটাকে হালকা করার জন্য আমি বললাম, ও তোমাদের মনের ভুল, ও কিছু না। ওরা কিছুতেই নিচে আর যাবে না, বাধ্য হয়ে আমি বললাম, ঠিক আছে এখানে শুয়ে পড়। জিজ্ঞেস করলাম নীচের ঘরে তালা দিয়ে এসেছো, ওরা জানাল – হাঁ। একই রুমে দুটি আলাদা খাট থাকায় দুটিকে একসঙ্গে করে দিলাম। আমরা চারজন এবং ওরা দুজনের শুতে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলে মনে হল। এরপরে পুনরায় সকলে মিলে একসাথে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ ছোট মেয়ে বলল, বাবা দেখো জিরো ল্যাম্পটা জ্বলছে। সকলে দেখলাম, সত্যিই ওটা জ্বলছে। বাবাই জিজ্ঞেস করল যে, কেন ওটা জ্বলছিল না? আমরা সমস্বরে জানলাম না। এখন টিউব লাইট ও নাইট ল্যাম্প দুটোই জ্বলছে। আবার উঠলাম একটা আলো বন্ধ করার জন্য। স্যুইচ বোর্ডে হাত দেওয়ার আগেই টিউব লাইট নিভে গেল। তবুও স্যুইচটা বন্ধ করলাম না। পুনরায় শুয়ে পড়লাম। যেই শুয়েছি অমনি টিউব লাইট টা জ্বলে উঠল। লক্ষ্য করলাম যে এখন আবার নাইট ল্যাম্পটা জ্বলছে না (যেটা কিছুক্ষণ আগে জ্বলছিল)। কি কর উচিত ভাবছি। রাজা, বাবাই আমার wife একদম চুপ। (এমতাবস্থায় বড় কন্যা কাঁদতে আরম্ভ করল সঙ্গে ছোটও)। মোবাইলে ঘড়িতে তখন 12:45। ঘরের দরজার কাছে দাড়িয়ে একটি ধূমপানের বস্তু জ্বালালাম। ধূমপান শেষ করলাম। Wife বলল এসো তো শুয়ে পড়। আবার শুয়ে পড়লাম। সকলেই কথা বলে চলেছে, কন্যাদের কান্না বন্ধ। প্রায় এক মিনিট অতিক্রান্ত, পুনরায় লাইট নিভে গেল। ঘর অন্ধকার। আবার কন্যাদের কান্না আরম্ভ, সঙ্গে রাজাও প্রায় কেঁদে ফেলে এ রকম অবস্থা। ধমক দিয়ে আংশিক চুপ করালাম। বাবাই ইতিমধ্যেই ফোনের টর্চ জ্বালিয়েছে। রাজাকে বললাম কেয়ার টেকারকে ফোন করতে। তিন চারবার ফোনে রিং হয়ে গেল, ফোন ধরল না। এরপর আমি আমার মোবাইল থেকে ফোন করতে যাবো এমন সময় আবার লাইট জ্বলে উঠল (নিজে থেকে, আমরা প্রত্যেকেই বিছানায় বসে)। ওই অবস্থায় দুবার ফোন করলাম, রিং হয়ে গেল, ও ফোন ধরল না। সবাইকে বললাম লাইট জ্বলুক, শুয়ে পড়। এবার একটু long gap, প্রায় 2/3/4 মিনিট হবে পুনরায় লাইট বন্ধ হয়ে গেল (এতক্ষণ কিন্ত ফ্যানটা চলছিল, তাই নিশ্চিত যে কখনো বিদ্যুৎ চলে যায় নি)। খুব চিন্তায় পড়লাম, এভাবে সারারাত কাটাবো কি করে? বিজ্ঞের মতো সকলকে নির্দেশ দিলাম যে, শুয়ে পড়ো তো, ও জ্বলা নেভা করুক (মন কিন্ত সায় দিচ্ছে না, শুয়ে পড়তে)। Wife বলল, একটা জিনিস খেয়াল করেছ অত বড় বিল্ডিংয়ে সব রুম ফাঁকা, আমি বললাম আজ শনিবার, কাল হয়তো fill up হয়ে যাবে। (ঘটনাটি দোলের দু দিন আগে, আমি বরাবর ঐ হিসাব করেই যাই) মনে হয় এখনো সব বোর্ডাররা আসেনি। আমি, বাবাই আর wife বাদে ওরা বলছে যে, এখানে আর থাকবে না। আমি ওদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি এমতাবস্থায় ফ্যানটা গেল বন্ধ হয়ে (নাইট ল্যাম্পটা কিন্তু জ্বলছে)। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম, ফ্যান আর লাইট এর switch দুটো বহুবার অফ, অন করলাম (মোবাইল এর আলোতে), কিন্তু বৃথা চেষ্টা, ফ্যান অন হল না, আলো জ্বলল না। অল্প কিছুক্ষন অফ অন করার পরে আবার লাইট জ্বলল। কিন্তু এর মধ্যে আমরা সকলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এই বিল্ডিং এ আর নয়। আমি ও রাজা দুজনে দুটো ধূমপানের বস্তু সঙ্গে মোবাইল এর টর্চ জ্বালিয়ে কোনোরকমে ম্যানি ব্যাগগুলো সঙ্গে নিয়ে যে যে অবস্থায় ছিলাম রুমে তালা দিয়ে নীচে চলে এলাম। বহু ডাকাডাকির পরে কেয়ার টেকার উঠলে, আমাদের মনে যা এসেছিল বলেছিলাম, কিন্তু উনি কোন উত্তর দেন নি (বললাম কাল সকালে কথা হবে)। রাজা জিজ্ঞেস করল, দাদা কি হবে এখন? আমি বললাম দেখছি, চল। সবাই একসাথে বলল কোথায়? চল বলে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটতে আরম্ভ করলাম উল্টোদিকে (মানে স্বর্গদ্বার / স্টেশন এর দিকে)। আমার মনে ছিল গতবার (2015) যেখানে ছিলাম, সেটা একদম বালিয়াপান্দা পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই। সেখানে আমি (নূতন কেনা ক্যামেরা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে রাত 2টো পর্য্যন্ত) ব্যালকনিতে বসে দেখেছি যে, রাতে প্রায় ভালই পুলিশ টহল থাকে। তাছাড়া চিন্তা করেছি সোজা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে উঠবো। কিছুদূর হাঁটার পর যথারীতি পুলিশ দেখলাম (2 জন), ওনারাও আমাদের দেখতে পেল, পথ আটকাল। রাত তখন 1:35 (মোবাইল এর ঘড়িতে)। আমরা সকলে মিলে আমাদের অদ্ভূত অভিজ্ঞতার কথা বললাম। আমাদের তখন কাতর আর্তি একটা ঘর খুঁজে দিন, রাতটুকুর জন্য। বিশ্বাস করল কি জানি না, তবে খুবই সাহায্য (ট্যুরিস্ট বলে কি না জানি না) করেছিলেন। আমাদের সঙ্গে নিয়ে শুরু হল ওনাদের ঘর খোঁজার অভিযান (ঐ অবস্থায় বাবাই বুদ্ধি করে ভোটার কার্ডটা পকেটে নিয়েছিল)। দোলের সময় খুবই চাপ ঘর পাওয়া। পুলিশ দুটো আমাদের সঙ্গে নিয়ে প্রায় 8/10 টা হোটেলে লাঠির ঘা দিয়ে reception এ গিয়ে উড়িয়া ভাষায় ঘরের ব্যাপারে বলছে, কিন্তু সবাই বলছে “No Room”। রাত বাড়ছে, আমি তো টেনশনে ঘেমেনেয়ে একাকার। wife, কন্যাদ্বয় এবং সহ কর্মীদের আমি যে একমাত্র ত্রাতা। এমতাবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে পুলিশগুলো আমার কন্যাদ্বয়ের সাথে সমানতালে ইয়ার্কি মেরে চলেছে, আমার কিন্তু আর ভালো লাগছে না। মাঝখানে একবার ঠিক হল আমাদের থানায় রাখবে, আমরা তাতেও রাজি হলাম, কিন্তু আবার নিজেরাই কোন কারণবশত রাখতে রাজি হল না। যাই হোক, অবশেষে আমারা এবং পুলিশ, উভয়ের প্রচেষ্টায় ভোটার কার্ড (original) জমা রেখে রাতটুকু আশ্রয় পেলাম “Kakson Villa” নামক হোটেলে, শর্ত একটাই সকাল 7:00 টায় ঘর ছাড়তে হবে (যদিও সকলের অনুরোধে 8:00 টা তে রাজি করলাম)। 2500/- টাকার বিনিময়ে, সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের পর, পুলিশদ্বয়কে শুভ রাত্রি ও ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম দোতলার একটি রুমে। একটি খাট সকলের হবে না, আবেদন জানতে নিচে বিছানা করে দিল। আমি পরিবার নিয়ে সঙ্গে রাজা ও বাবাইকে নিয়ে এক্ঘরেই (এলার্ম দিয়ে) শুয়ে পড়লাম, রাত্রি 2:40 এ। (খুব একটা জোরাজুরি করিনি রাজা ও বাবাই কে খাটে শোয়ার জন্য, যদিও ওরাও রাজি হল না)।

চোখ জ্বালা করছে, উপায় নেই, এলার্ম দেয়া ছিল, সেইমতো 6:30 এ উঠে ঘর খুঁজতে বেরোলাম। আমি, রাজা ও বাবাই। প্রত্যেকে আলাদা ভাবে। আশেপাশের হোটেল তন্নতন্ন করে খুঁজে Low Budget এর দুটি ঘর পেলাম @ 600/- each। রাজি হয়ে গেলাম, কারণ 7200 + 2500 = 9700 টাকা আগেই খরচ হয়ে গেছে ঘরের জন্য। কন্যাদ্বয় এর ইচ্ছা (AC Room) আর পূরণ করতে পারলাম না। আবার 3600/- টাকা রুমের জন্য (3 দিন), পুরোটাই অগ্রিম দিতে হবে, হোটেল থেকে দাবি করল, দিয়ে দিলাম। ভোটার কার্ড জমা রেখে, Receipt সংগ্রহ করে গেলাম পুরনো ভৌতিক হোটেল এ, Luggage নিয়ে আসার জন্যে।

কেয়ারটেকারকে বহু জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনাটা খুলে বলার জন্য। “কৈ কিছুই তো হয় নি, আমি তো কিছু দেখিনি, কিছু জানিনা” ইত্যাদি ওনার বক্তব্য। রাজাও ছাড়বে না, “কেন কাল সকলে আপনি কিছু বলেন নি” ইত্যাদি। শেষে আমরা চলে যাবো শুনে, উনি জানালেন যে, ঠিক পিছনের একটি incomplete হোটেলে এক যুবক ও যুবতী দু/তিন বছর আগে আত্মহত্যা করেছিল (সেটি এখন পূরো বন্ধ)। এছাড়া উনি নিজে রাতে হাঁটা চলার শব্দ শুনেছেন, কিন্তু কিছু দেখেন নি। বুঝতে পারলাম এই রকম ঘটনা উনি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ঘটনাক্রমে উনি (Caretaker) ঐ বিল্ডিং এ থাকেন না, দুটি attach বিল্ডিং এর দ্বিতীয়টার Basement এ থাকেন (আমাদের টা Batakrishna Enclave, উনি থাকেন Surya Enclave এ)। এখন তো পরিস্কার উনি কেন দ্বিতীয় বিল্ডিং এ থাকেন। যাই হোক, Luggage গুচ্ছতে প্রথমে গেলাম উপরের ঘরে। আমরা সবাই ব্যস্ত, কিছু পরে না থাকে, এই ভেবে। বড় কন্যা টয়লেট থেকে ঘুরে এসে বলল, রাজা কাকা সাবানটাতো উপরে, কালকে তুমি যেটা নীচে খুঁজছিলে? রাজা বলল, তুই বা তোর বোন কেউ এনেছিস? কিন্তু ওরা দুজনেই এর চরম প্রতিবাদ করে উঠল (ছোটবেলা হলেও ওরা খুব প্রতিবাদী), আমি ওদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে স্যুইচ বোর্ড নিয়ে পড়লাম। আশ্চর্যের বিষয় যতবার প্রত্যেকটা স্যুইচ অন অফ করেছি, ততবারই জ্বলেছে ও নিভেছে। প্রায় 15/20 মিনিট আমি এই প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলাম, কিন্তু ব্যতিক্রম হল না। অবাক দৃষ্টিতে স্যুইচ বোর্ডের দিকে তাকিয়ে (wife রেগে গেছে, তুমি কি আসবে, ওদের খিদে পাচ্ছে বলছে) রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। এবার ফ্রিজের থেকে মাছগুলো নিতে হবে, ফ্রিজ খুললাম, স্যুইচ দেওয়া, ঠান্ডা, মানে ঠিক আছে। গেলাম নীচের রুমে, এতক্ষণ সবাই ওপরে ছিলাম, সবার ভয় ধরে গেছে, তাই সবাই একসাথে গেলাম। তালা খোলা হল, প্রথমেই আমি ও রাজা ঘড়ি নিয়ে পড়লাম, আশ্চর্য, ঘড়িতে (wall) সঠিক সময় দিচ্ছে, 9:10 বেজেছিল। রাজা বলল, দাদা দেখেছেন, এখন কি বলবেন? আমার আর একটা টেস্টিং বাকী ছিল, Water purifier, সেটাও অন করলে জল পড়ছে, অফ করলে বন্ধ। অদ্ভুত ব্যাপার, কিছু বলার নেই, কাকে বলব, কি বলবো, মানে এর কি ব্যাখ্যা দেবো?

কোনোদিনই আমি এই ধরনের কিছু বিশ্বাস করি না। প্রথম জীবনে বহুদিন বহু দুরে catering এর সার্ভিস করে রাতে বা গভীর রাতে একা বাড়ি ফিরেছি, কিন্তু এই রকম কোন অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হতে হয় নি। (তখন লোক সংখ্যা এত ছিল না, 1993/1994 সাল, সার্ভিসিং করলে 30/- – 32/- টাকা পাওয়া যেত)।

Caretaker কে দিয়ে departure এ সই করিয়ে রুম ছেড়ে দিলাম। কিছুটা দূরে চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে প্রসঙ্গ উত্থাপন করলাম। উনিও জানলেন একই কথা (প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা), আরও জানলেন উল্টোদিকের অন্য একটি হোটেলে একই ঘটনার কথা)। আমার স্বল্প বুদ্ধিতে মনে হল জায়গাটা বেশ নিরিবিলি হওয়ার সুবাদে এই ধরণের অপরাধমূলক ঘটনা এদিকেই ঘটেছিল বেশী। বেলার দিকে বুকিং স্লিপ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে ফোন করে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করলাম, রাজি হল না, অতগুলো টাকা, মনটা বিষাদে ভরে উঠেছিল। নূতন রুম ছিল — বালিয়াপান্দাতে, সেকেন্ড bye lane, নাম মনে নেই, (বাড়ির মত, ভদ্রলোক পূরো পরিবার নিয়ে ওখানে থাকতেন, উড়িয়া, উরিশ্যাবাসী, আমাকে মহিলা দিদি প্রতিদিন বিকালে চা দিতেন) গিয়ে ঘটনাটা শেয়ার করতে বয়স্ক একজন যা জানিয়েছিল – তা হল বহু পূর্বে, বহু দূর থেকে, দাহ করতে এসে পয়সার অভাবে ওদিকে লাশ ফেলে দিয়ে চলে যেত অথবা নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজেরা দাহ করে যেত (মূল কথা বহু বহু বছর, আনুমানিক 60/70 বছর পূর্বে ঐ দিকটা / এলাকাটি অলিখিত শবদাহের জায়গা ছিল)। এছাড়া আত্মহত্যা, মালিক শ্রমিককে বেতন না দেওয়ায় এবং শ্রমিক মালিকের কুকীর্তি দেখে ফেলায় খুন ইত্যাদি ঘটনাবহুল এলাকা। সত্যি বা মিথ্যা যাচাই আমি করতে যাইনি, আমি গিয়েছিলাম বেড়াতে, তাই তো এটা “বেড়ানোর / ভ্রমণ কাহিনি।”

এর পরেও প্রতিবছর এবং বর্তমান বছরেও গিয়েছি, কিন্তু অত ভেতরের দিকে কখনই থাকি নি। যথাক্রমে 2017 ছিলাম Hotel Bangalaxmi। 2018 Akash Guest হাউস (চৈতন্যের স্ট্যাচুর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা মন্দিরের দিকে যাচ্ছে ঐ রাস্তায়) & 2019 গোচ্চিকার হাউস (beside চৈতন্য স্ট্যাচু)। 2020 Hotel Gayetri (মেরিন ড্রাইভ, যে রাস্তাটা ভেতর দিয়ে বাজারে গিয়ে মিশেছে)। এখন মোটামুটি এলাকাটা (বালিয়াপান্দা পর্য্যন্ত) বেশ জানা। আবার 2021 তে যাবো আশা করি, পরিস্থিতি আমার favour এ থাকলে।

সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

ধন্যবাদ :
লেখা – মলয় দত্ত
Facebook – Link

Leave a Reply

%d bloggers like this: